মেকা – আজ, কাল, পরশু
আহমদ ইসলাম মুকসিত, ব্যাচ-২৩, ক্যাডেট নং-১২৬০

Email: aimuqsit@yahoo.com
তারিখ: ৩রা ডিসেম্বর, ২০১৩

আরও একটি বছর চলে গেল কালের পরিক্রমায়। ২০১৪ সমাগত প্রায়। নতুনকে বরন করার ইচ্ছা মানুষের ¯^ভাবগত হলেও, নতুন কিছুকে গ্রহন করা সহজ নয়। সামনের বছর নির্বাচনের বছর – মেকা’র নতুন কমিটি গঠন করার বছর – একটি ¯^ত:স্ফুর্ত নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে – আর দশজন সাধারণ এক্সক্যাডেটের মত আমিও আশাবাদী। এই লেখাটিতে একজন ইসি সদস্য হিসাবে আমিতুলে ধরতে চাই আমার বা আমাদের অভিজ্ঞতা, সীমাবদ্ধতা বা লিমিটেশন, এবং গতিশীল মেকা’র জন্য কতিপয় পরামর্শ।

২০১১ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত মেকা দায়িত্ব নেবার পর থেকে আমাদের ছিল অনেকগুলি চ্যালেন্জ। প্রথম চ্যালেন্জটি ছিল ’মানসিক’। আমরা কতটুকু ’ডেলিভার’ করতে পারব!নির্বাচিত মেকা কি পারবে আগের কমিটি’র দক্ষতা ও কর্মতৎপরতার সাথে তাল মিলাতে? আমরা দায়িত্ব নেবার পর পরই ছিল একটি পূর্নাঙ্গ রিইউনিয়ন করার ধাক্কা। নতুন ইসি’তে পুরাতন কোন মেম্বারও ছিল না যে কিনা তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। অনভিজ্ঞতা থাকলেও প্রতিটি সদস্যের প্রচেষ্টা ও উদ্দিপনা’র কোন কমতি ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের মনোবল ছাড়া যুদ্ধ জেতাটা কঠিন – মেকা’র প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সাধারন সৈন্য, থুক্কু ইসি মেম্বার বা সাধারণ সদস্য পর্যন্ত সবারই মনোবল ছিল যুদ্ধজয়ের মানসিকতায় টইটুম্বুর। কার সাথে যুদ্ধ? কিসের সাথেই বা যুদ্ধ? জানি না। তবে এটুকু জানি এটা ছিল নিজের সাথেই নিজের যুদ্ধ – নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার যুদ্ধ। এরপর, একে একে আমরা আরও বেশকিছু প্রোগ্রাম কন্ডাক্ট করি – এজিএম, আলমগীর ভাইএর জন্য চ্যারিটি কনসার্ট, ৪৪তম ব্যাচের ক্যাডেটদের রিসেপশন, গলফ টুর্নামেন্ট, ৪৫তম ব্যাচের ক্যাডেটদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, ইফতার-২০১২ ও ২০১৩, কলেজে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন, কলেজে মেডিক্যাল ক্যাম্প, বনভোজন-২০১৩, কোয়ালিটি-ইন-এডুকেশন’এর উপর কর্মশালা, বৃক্ষরোপন কর্মসূচী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড: আতিউর রহমানের সর্ম্বধনা অন্যতম। সর্বশেষ ছিল ২০১৩ সালের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের গোল্ডেন জুবিলী উদযাপন। কতটুকু সফলকাম হলাম – তার বিচারের ভার আপনার অর্থাৎ মেক’ার পাঠকদের। তবে আমাদের আন্তরিকতার কোন ত্রæটি ছিল না!

মেকা’র নিবন্ধন নেয়া হয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার প্রতিষ্ঠান হিসাবে অর্থাৎ নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান। এটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত ’সামাজিক ব্যাবসা’ প্রতিষ্ঠানও নয় যেখানে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচটা অন্তত উঠে আসবে ব্যবসার বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে। এটি সম্পূর্ণভাবে অলাভজনক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার মাস গেলে খরচের খাতায় হিসাবের অংক লেখা হলেও, জমার খাতায় হিসাব মেলানোটা কঠিন। দু:খজনক হলেও সত্য, অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা বা সেবাধর্মী উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হয়, অর্থের অভাবে। এখনকার কমিউনিকেশন টেকনোলজি’র কারনে, প্রায় প্রতিদিনই আমরা মেকা’র গ্রæপ-ইমেইলে [meca@googlegroups.com]  কারো না কারো ইমেইল বার্তা পাই – মজার টপিক, হালকা টপিক, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, সাহিত্য প্রতিভা অথবা ¯্রফে একটা অনুভূতি শেয়ার করা। মেকার অনেক সদস্যই নিয়মিত ইমেইলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখে থাকেন। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেবার পর থেকে এই ইমেইল গ্রæপে সদস্য সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি সদস্যরা আরও বেশী মাত্রায় এর সাথে সম্পৃক্তও হয়েছেন। মাঝে মাঝে ইমেইলের কিছু বার্তা কারো কারো কাছে অপছন্দিয় হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটা অবশ্যই একটি ¯^াস্থ্যকর তৎপরতা বৈকি।

অফিসিয়াল ইমেইল ছাড়াও মেকার একটি অতিতৎপর ফেসবুক গ্রæপ আছে যেখানে সদস্যরা তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি, লেখা, অভিজ্ঞতা পোষ্ট করেন বা শেয়ার করেন। আর এই ইমেইলে বা ফেসবুক পোষ্টেই আমরা জানতে পারি মেকা’র পক্ষ থেকে ইসি’র আরও কি কি দায়িত্ব পালন করা উচিত বা ছিল। প্রস্তাবনা’র অনেকগুলিই কিন্তু, ’অর্থকরী’, অর্থাৎ বা¯তবায়নে প্রয়োজন অর্থের সংস্থান। এরকম প্র¯তাবনাগুলি আসার পরে ইসি কিন্তু বসে থাকে না – আমরা চিন্তা করি, প্রেসিডেন্ট মিটিং ডেকে আলোচনা করেন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে। আমরা আস্ফালন করি অনেক – কষ্ট পাই পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে না পেরে!

এটা ছাড়াও আরও কিছু দৈনন্দিন প্রয়োজনে, দৈনিক আহার-নিদ্রার মতই আমাদের মত প্রতিষ্ঠান চালাতে অর্থের প্রয়োজন হয়। একটা প্রতিষ্ঠান চালাতে অফিস স্পেস লাগে, সেখানে দরকার বিদ্যুত, পানি আর চা খাওয়ার জন্য গ্যাস-সংযোগ। দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনার জন্য শিক্ষিত লোকবল। এই রুটিন কর্মসূচী ছাড়াও সময় সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য খরচের অংকটাও কিন্তু কম নয়। প্রসক্সগত: বলে রাখা ভাল, খরচের কোন অংশই কিন্তু ইসি মেম্বারদের বেতন-ভাতা প্রসংগে নয়! তাঁরা শুধু অবৈতনিকই নন, সার্ভিসটাও দেন মনের তাড়না থেকে।কথা উঠতে পারে এতদিন কিভাবে চলল মেকা – আসলে মেকা’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিচালিত হয়ে আসছে এর গুটিকয়েক হিতৈষী বড়লোক ব›ধুদের আর্থিক সহায়তায়। বলা যায় ইনারাই হলেন মেকা’র মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য জীবনীশক্তি¯^রূপ। কিন্তু, এটা ঠিক গনতান্ত্রিক নয়! ভাবুনতো একবার – আমাদের কলেজ থেকে এই পর্যন্ত ৪৫টি ব্যাচ বের হয়ে গেছে। প্রতিব্যাচে গড়ে কম বেশি ৫০জন করে ক্যাডেট ধরলেও – মোট এক্সক্যাডেট সংখ্যা হবে ২০০০এর অধিক; যাদের অধিকাংশই সমাজে প্রতিষ্ঠিত – আর্থিকসংস্থান সম্পন্ন!বর্তমান বাজারমূল্যে গড়ে মাসিক ১০০ টাকা করে তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা মোটেও কষ্টকর কোন ঘটনা হওয়ার কথা নয়, বেশিরভাগ ম্যাকানের জন্য। হিসাব করে দেখুনতো – এটাতে মেকা’র দৈনন্দিন খরচটার জন্য কারো মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হয় কিনা! আমার দৃষ্টিতে, আর্থিক ¯^চ্ছলতা যেকোন মানুষ বা প্রতিষ্ঠানকে আত্মমর্যাদাশীল হতে সাহায্য করে!

আমি জানি বর্তমান বাস্তবতায় অর্থ দেবার মানসিকতা আমাদের থাকলেও, নিয়মিত তা সংগ্রহ করাটা একটা চ্যালেন্জ বৈকি। যদিও, আমরা এই লাইনে খুব একটা এগোয়নি, কিন্তু, কিছু একটা করার চেষ্টা ছিল। দেশে যাঁরা আছেন তাঁদেরকে আমরা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলতে পারি। আমাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্টে’র ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দেশের বাইরে যাঁরা আছেন, খুবই ¯^াচ্ছন্দের সাথেই তাঁদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্য মাসিক খরচের ব্যবস্থা করতে চাইবেন, সম্ববত: আমার অনুমিত গড়ের চাইতে অনেকবেশী পরিমানেই। আমি মনে করি আগামীর ইসি এই ব্যাপারে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবেন।

এবার আসি একটু অন্য প্রসংগে – মেকা’র ওয়েবসাইটটি ঠিক আমাদের কলেজের বা আমাদের ক্যাডেটদের মানসম্পন্ন নয় বলেই আমার ধারনা। এটাকে কি আমরা আরো যুগোপযোগী করতে পারি !এবারের ইসি এই ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচেছ – কিন্তু, এটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা বর্তমানে গুগলগ্রæপে (ইমেইল সার্ভিস) যে বাকচিৎ করছি, তা কিন্তু, আমাদের ওয়েবেই করা যায় আরও যথার্থ আর প্রাসঙ্গিকভাবে। আমাদের ওয়েবটা হতে পারে এক্স-ক্যাডেটদের চলমান ডিরেক্টরী। প্রতি রিইউনিয়নের সময় ইসি থেকে ডিরেক্টরী করার একটা তাড়না থাকে – কিন্তু, হালনাগাদ তথ্যসমৃদ্ধ একটি ডিরেক্টরী করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয় – একটা প্রফেশনাল ওয়েবসাইট আমাদের এই আপাত: ঝামেলার কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে।

আরেকটি প্রসঙ্গ না আনলেই নয়। আমাদের ’মির্জাপুর এক্স-ক্যাডেটস্ এসোসিয়েশন (মেকা)’ চলে একটি কমিটি’র মাধ্যমে, যাকে আমরা বলি ’এক্সিকিউটিভ কমিটি (ইসি)’। এই ইসিও কিন্তু বিভিন্ন বড় ইভেন্ট বা অনুষ্ঠান আয়োজনে আরও অন্যান্য এক্স-ক্যাডেটদের সহোযোগীতা গ্রহন করে- সবার সম্মিলিত, নি:স¦ার্থ প্রয়াসেই একটি বড় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। তবে এটা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, একটা চাকা’র জন্য পুরো গাড়িটাই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে বাধ্য হয়। যেহেতু, এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান – এবং, এর নির্বাহী কমিটি’র সদস্যদের কেউই বেতনভুক্ত নন; অনেকসময় দেখা যায় ব্যাক্তিগত ঝামেলা’র কারনে একজন ইসি সদস্য পরবর্তীতে তাঁর ’কমিটমেন্ট’ আর ধরে রাখতে পারেন না। যা কিনা অন্যদের উপর অকারনে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয় বহুগুনে। সামনে যেহেতু নতুন ইসি’র নির্বাচন – আমরা কি ইসি’র প্রতিটি পজিশনের জন্য একটি করে জব-ডেসক্রিপশন তৈরী করবো ?যাঁরা ইলেকশনে দাঁড়াবেন – তাঁরা তাঁদের দ্বায়িতটুকু পুরোপুরি অবগত হয়েইনমিনেশন পেপার জমা দিবেন। নির্বাচিত হবার পরে হাজার বার ফোনকল করার পরেও সংসদে (!) আসবেন না – তা হতে পারে না। এতে করে প্রত্যেক সদস্যরই তাঁর কাজের প্রতি ঔদাসিন্যতা কমবে বলে আমি মনে করি, ইসির পুরো মেয়াদ অবধি।

পরিশেষে বলতে চাই ’পরিবর্তনশীলতাই যেমন জীবন’ তেমনি ভাল কাজের এবং ভাল করে কাজ করারও কোন সীমাপরিসীমা নাই – Sky is the limit! আমরা চেষ্টা করেছি সংগঠনটিকে আরও একটু সংগঠিত করতে – কিছুটাও যদি পেরে থাকি, এটাকে আরও সুন্দর আর সাবলীলভাবে পরিচালনার ভার আগামী নেতৃত্বের উপর বর্তাবে। এবং, তাঁরাও আগামীতে, আমার বিশ্বাস, এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আরও প্রানের স্পন্দন আনতে সক্ষম হবেন।
সবাইকে ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা…

Happy New Year – 2014!

0 Comments

Leave a reply

©[2015-2019] Mirzapur Ex-Cadets' Association Developed By Esoftarena Limited

CONTACT US

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Sending

Log in with your credentials

Forgot your details?